I am tree and she is tree: চৈনিক ভাষা বিভ্রাট বৃত্তান্ত

I am tree and she is tree: চৈনিক ভাষা বিভ্রাট বৃত্তান্ত

১৯৯৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজেক্টের বিল্ডিং বা ইন্টেরিয়র ম্যাটেরিয়াল সিলেকশনের জন্য আমাকে বহুবার চীনে আসতে হয়েছে। বহুবার চীনে গেলেও চীনের ভাষা আমি কিছুই শিখতে পারিনি। চীনা বন্ধুরা বলেছে চীনা ভাষায় প্রায় ৫০ হাজার ক্যারেকটার আছে, এর মধ্যে মাত্র হাজার বিশেক সাধারণ ডিকশনারিতে পাওয়া যায়, বাকিগুলো শুধু পন্ডিতরা জানে। একজন মোটামুটি শিক্ষিত চীনা ৮/৯ হাজার ক্যারেকটার জানে আর মোটামুটি ২ হাজারের মতো ক্যারেকটার জানলেই ওদের খবরের কাগজ পড়া যায়।

আমি চীনা ভাষা শিখতে না পারলেও আমাদের দেশের অনেক অর্ধ শিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত তরুন ব্যাবসায়ীদের দেখেছি চমৎকার চীনা ভাষা বলতে। সত্যি কথা বলতে গেলে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এদেশের অল্প শিক্ষিত তরুনদের খুব তাড়াতাড়ি সে দেশের ভাষা শিখে তাদের সাথে কাজ করতে দেখেছি কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো দীর্ঘ ১০ বছর নিজের দেশে স্কুলে ইংরেজি ক্লাস করেও এরা ইংরেজি ভাষা শিখতে পারেনি। এর কারণ কি? বহু চিন্তা করেও আমি এর কোন উত্তর বের করতে পারিনি।

বিভিন্ন কাজে চীনের প্রায় চল্লিশটি শহরে আমার যাবার সৌভাগ্য হলেও আমার প্রধান গন্তব্য বরাবরই ছিলো প্রায় ২০০০ বছরের ইতিহাসের ধারক  গুয়াংজু নগর। প্রাচীন কাল থেকেই পর্তুগিজ বনিকেরা গুয়াংজুকে ডাকতো “Cidade de Cantao”, সেখান থেকেই বৃটিশরা একে ক্যান্টন নামে ডাকা শুরু করে, তবে ১৯১৮ সালে আবার এর গুয়াংজু নাম অফিসিয়ালি ফিরিয়ে আনা হয়।

১৯৯৫ সালে প্রথমবার যখন চীনে আসি তখন গুয়াংজু শহরের এক ট্যাক্সি ড্রাইভারকে  সামান্য Railway Station শব্দটি আধা ঘন্টা চেষ্টা করেও বুঝাতে পারিনি। আমাদের দেশের বা এ উপমহাদেশের একজন চরম অশিক্ষিত রিকশাওয়ালাও বেসিক বেশ কিছু ইংরেজি শব্দ জানে। সে হয়তো নিজেও জানেনা যে এগুলো ইংরেজি শব্দ, এর কারণ হলো আমদের দীর্ঘ ১৯০ বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক ও শিক্ষা কাঠামোর উত্তরাধিকার।

চীন সে অর্থে আমাদের মতো রাজনৈতিক ভাবে কখনো বৃটিশ উপনিবেশ ছিলো না তবে বৃটিশরা বহু শতাব্দী ধরে দক্ষিণ চীনে ব্যাবসা বানিজ্য করেছে। বৃটিশরা প্রধানত চা, রেশম ও পোর্সেলিনের ক্রোকারিজ চীন থেকে আমদানি করতো। তখন রৌপ্য মুদ্রায় কেনাবেচা হতো আর বৃটিশদের ছিলো রৌপ্য মুদ্রার প্রচন্ড সংকট। ধূর্ত বৃটিশরা তখন রৌপ্য মুদ্রার বিপরীতে ভারতে চাষ করা আফিম দিয়ে বার্টার বানিজ্য শুরু করে ও অচিরেই প্রায় পুরো চীনের জনসাধারণকে আফিমে আসক্ত এক অকর্মা জাতি বানিয়ে ফেলে। অসংখ্য আফিমখোরদের ভারে চীনের সামাজিক কাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। এর ফলশ্রুতিতেই ১৮৩৯ ও ১৮৫৬ সালে চীনের কুইং সাম্রাজ্যের সাথে বৃটিশদের যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় আফিম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এক পর্যায়ে এ যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে বৃটিশরা হংকংকে ৯৯ বছরের জন্য নিয়ে নেয় আর গুয়াংজু ও সাংহাই সহ কয়েকটি বন্দরে বাধাহীন বানিজ্য করার অনুমতি পায়।

হংকং যেহেতু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে আমাদের মতো বৃটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে তাই আমাদের মতো ওদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশাসন ইংরেজি ভাষার নিয়ন্ত্রাধীন হয়ে যায় আর সেকারণে ইংরেজি হয়ে যায় হংকং এর জনসাধারণের প্রধান ভাষা। হংকং এর সামান্য দোকানদার থেকে শুরু করে যেকোনো ট্যাক্সি ড্রাইভারের সাথে অনায়াসে ইংরেজিতে মতবিনিময় করা যায়।

অন্যদিকে প্রচুর ব্যবসা বানিজ্য করার পরেও পাশের শহর গুয়াংজুর জনসাধারণের মাঝে ইংরেজির সামান্যতম প্রসারও হয়নি। রাজনৈতিক ঔপনিবেশিক কাঠামো কিভাবে একটি জাতির ভাষার চরিত্র বদলিয়ে দিতে পারে, হংকং সেটার একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ।

আমার এ লেখার উদ্দেশ্য সিরিয়াস ভাষাতাত্ত্বিক কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা নয় বরং দীর্ঘ সময়কাল ধরে আমার চীনদেশে ভ্রমণের সময় বিশ্ব বানিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত হবার জরুরি প্রয়োজনে নতুন ‘ হাফ ইংরেজি ‘ শেখা চীনাদের সাথে ঘটে যাওয়া আমার বিভিন্ন মজাদার ভাষা জনিত অভিজ্ঞতা শেয়ার করা। উপরের সামান্য প্রারম্ভিক বর্ণনাটা দিলাম শুধু ইংরেজি ভাষার সাথে চীনাদের অতীত ঐতিহাসিক অবস্থানটা বোঝানোর জন্য।

সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততার পরে আমি রাতেরবেলা এখন এ লেখাটা লিখছি গুয়াংজুর তিয়ানহে ডিস্ট্রিক্টের এক কম দামি হোটেলে বসে, এ হোটেলের মেইন লবিতে মাত্র দু’জন কর্মচারী। এক পিচ্চি সাইজের রিসেপশনিস্ট মেয়ে আর একজন মধ্য বয়েসী সুমো কুস্তিগির সাইজের দারোয়ান। দারোয়ান ব্যাটা মেইন গেটের পাশে একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে থাকে আর তার মুখামুখি অন্য একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে একটা পকেট টেলিভিশন (মোবাইল ফোনের চেয়ে সামান্য বড়) রেখে সারা দিন রাত গভীর মনযোগ দিয়ে চীনা টিভি সিরিয়াল দেখে। অন্যদিকে রিসেপশনিস্ট মেয়েটি এতো ছোট যে উঁচু আরমানি ব্রাউন মার্বেলের রিসেপশন কাউন্টারের পিছনে কেউ যে বসে আছে ঝুকে পড়ে উঁকি না দিলে সেটা দেখা যায় না।

রিসেপশনিস্ট বা হাউস কিপার স্টাফ সহ সারা হোটেলের একজন মানুষও তিল পরিমাণ ইংরেজি বোঝে না। এদের সাথে সব প্রয়োজনীয় সব কথাবার্তা বলতে হয় ইশার, ইঙ্গিত বা বডি ল্যাংগুয়েজের মাধ্যমে। অতি প্রয়োজনীয় কিছু জিজ্ঞেস করলে হোটেল লবির ছোটখাটো সেই রিসেপশনিস্ট মেয়েটি তার স্মার্ট ফোন আমার মুখের সামনে তুলে ধরে আমার কথা রেকর্ড করার জন্য আমার দিকে পিটপিটিয়ে তাকিয়ে থাকে। আমি আমর কথা অতিরিক্ত ধিরে ধিরে ইংরেজিতে বলি, তারপর সে পুটপুট করে তার স্মার্টফোন চাপাচাপি শুরু করে। এভাবে প্রায় কয়েক মিনিট বিরামহীন টেপাটেপির পর সে একটা ইংরেজি বাক্য সহ ফোনের স্ক্রিন এবার আমার চোখের সামনে তুলে ধরে রাখে আর ইশারায় জানতে চায় আমি যা বলতে চেয়েছি সেটা এ ইংরেজি বাক্যের মধ্যে সঠিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে কিনা। আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াই, তখন সে আমার প্রশ্ন সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে আবার পুটুর পুটুর স্মার্ট ফোন টেপাটেপি শুরু করে ও আমার প্রশ্নের উত্তর সম্বলিত একটি  বা দু’টি ইংরেজি অনুবাদ বাক্য আমার চোখের সামনে তুলে ধরে। এভাবে একটি সামান্য প্রশ্নের উত্তর পেতে আমার ৫ থেকে ৬ মিনিট অপেক্ষা করে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।

মজার কথা হলো এই রিসেপশনিস্ট মেয়েগুলো একটি মাত্র ইংরেজি বাক্য না বুঝলেও আমি লক্ষ্য করে দেখেছি এরা অবসর সময়ে রিসেপশন কাউন্টারে বসে সারাদিন তাদের স্মার্ট ফোনে ইংরেজি গান শোনে। সে কারণেই আমি সবসময় বলি, জগৎ বড়ই রহস্যময়।

তবে এবার একটা মজার জিনিস দেখেছি তাইজুর এক চীনা বন্ধুর কাছে। জিনিসটা হয়তো অন্যেরা আগে থেকেই চেনে তবে আমি এটা এবার প্রথম ব্যবহার করেছি বা আমাকে দিয়ে ব্যবহার করানো হয়েছে। জিনিসটা হচ্ছে এক জোড়া সাদা রঙের Realtime Translation Earbud,  চীনা বন্ধুটি আমাকে একটা Earbud দিয়ে বললো বাম কানে লাগাতে আর ও অন্যটা ওর নিজের ডান কানে লাগালো। তারপর কিচিনিং মিচিং ফিচিং করে অনর্গল চীনা ভাষায় কথা বলে যেতে লাগলো আর আমি বিস্মিত হয়ে আবিস্কার করলাম যে আমার কানে সে কথাগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে বাজতে লাগলো। বিশেষ করে পরস্পরের ভাষা না জানা ব্যাবসায়ীদের জন্য বা দুই ভাষাভাষী যে কোন মানুষের মধ্যে কথপোকথনের জন্য এটা খুবই তাৎক্ষণিক ভাবে কার্যকর একটা ডিভাইস।

এটাসেটা, অনেক কথা লিখে ফেললাম, তবে যে বিষয় নিয়ে আমার এ লেখার সূত্রপাত, অর্থাৎ চীনে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া  মজাদার কিছু ভাষা বিভ্রাট সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার লিখছি।

চীনে আমার এক বন্ধু ছিলো, ওর নাম মো ঝিঝি। আমি মো ঝিঝিকে ডাকতাম ঝিঝি পোকা। তবে ঝিঝি পোকার ইংরেজি প্রতিশব্দ না  জানার কারণে আমি কখনো সেটা ওকে বলতে পারিনি। আমি নিশ্চিত, চীনেও ঝিঝি পোকা আছে এবং হয়তো মো ঝিঝি নিজেও অন্যান্য সব চীনাদের মতো ঘাস ফড়িং ও আরো অন্যাসব পোকা মাকড়ের মতো ঝিঝি পোকাও চানাচুরের মতো ভেজে ভেজে খায়।

এই মো ঝিঝি একদিন আমাকে একত্রে লাঞ্চ খেতে খেতে বললো,

My son fire fire all house.

এ বাক্যে আমি যা বুঝেছিলাম সেটা হচ্ছে, ওর ছেলের ঘরে বড় ধরনের আগুন লেগেছে।

আমি কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম যে, যার ছেলের ঘরে আগুন লেগেছে সে কিভাবে এখন আমার সাথে সি-ফুড রেস্টুরেন্টে বসে বসে আরাম করে লাঞ্চ খাচ্ছে, তবুও আমি খুব ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

Did you call fire service?

No time call, he is hospital.

বুঝলাম ছেলেকে জরুরি ভাবে হসপিটালে নিয়ে যেতে হয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই ছেলের শরীরের উল্লেখযোগ্য অংশ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে তাই আমি আরও সহমর্মি হয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

কতোখানি পুড়েছে?

এবার ও আমার প্রশ্নে কিছুটা হকচকিয়ে গিয়ে উলটো জিজ্ঞেস করলো, পোড়ার কথা আসলো কোত্থেকে। ওর কথায় আমিও ডাবল বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম।

যা হোক, এখানে আর পুরো বৃত্তান্তে গেলাম না, এরপর আমাদের মধ্যে অনেকক্ষণ কথা হলো, এবং সব আলাপের পর সবশেষে আমি যেটা বুঝলাম , সেটা হলো fire fire এর অর্থ হচ্ছে জ্বর, আর,  all house এর অর্থ হচ্ছে পুরো শরীরে। মোদ্দা কথা হলো,

ওর ছেলের সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এনেছে।

কোথায় ছেলের ঘরে আগুন লেগে ছেলের অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে যাওয়া আর কোথায় ছেলের গায়ে জ্বর ওঠা।

তবে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমিও ইংরেজি ভাষার এক নতুন ডাইমেনশনের চৈনিক তরিকা শিখে ফেললাম। পরেরদিন ওর সাথে দেখা হতেই ঐ নতুন শেখা তরিকার ব্যকরণ অনুসরণ করে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম,

How is your son fire today?

উত্তরে পিতার মুখের সারা পৃথিবী ব্যাপী পরিচিত সেই সার্বজনীন হাসি নিয়ে মো ঝিঝি বললো,

Fire gone, happy son is football.

আগেই বলেছি ততক্ষণে আমি ইংরেজি ভাষার চাইনিজ ভার্শনের তরিকা শিখে ফেলেছি, তাই এবার আমার আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, Fire gone, happy son is football এর অর্থ হচ্ছে,

ওর ছেলের জ্বর সেরে গেছে আর এখন তার সে সুপুত্র মহানন্দে ফুটবল খেলছে।

মো ঝিঝির আর একটি ঘটনা বলি। ওর বসবাস ছিলো গুয়াংজু আর হংকং মাঝে একদম হংকং এর সীমান্ত ঘেষে গড়ে তোলা শেনঝেন নগরে যদিও বর্তমানে সে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করে। মাও সে তুং মারা যায় ১৯৭৬ সালের শেষের দিকে, এরপর দেং জেয়াও পিং ক্ষমতায় এসে দক্ষিণ চীনের একটি নগন্য জেলে পল্লিকে অত্যাধুনিক শেনঝেন নগরে পরিনত করা শুরু করে ১৯৭৯ সালে। দেং জেয়াও পিং এর বিখ্যাত Open Door Policy এর  স্পেশাল ইকোনমিক জোন নির্ভর অর্থনৈতিক কৌশলের সর্বপ্রথম নীরিক্ষা হিসেবে এই শহর গড়ে তোলেন দেং জেয়াও পিং। আজ সারা পৃথিবীর মধ্যে ডিজিটাল টেকনোলজি আর ইলেকট্রনিকসের জন্য অন্যতম বিখ্যাত এই শহর।

১৯৯৬ সালের ঘটনা। মো ঝিঝি আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এই শেনঝেন শহর দেখাচ্ছে। এক পর্যায়ে ও আমাকে নিয়ে গেলো    দক্ষিণ চীন সাগরের শেনঝেন উপসাগরের পাড়ে গড়ে তোলা বিশাল শেনঝেন বে পার্কে। বিশাল পার্কে

ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় এসে এক সুভিনির শপ থেকে একটা গুলগুল্লা টাইপ কালো সানগ্লাস কিনে চোখে লাগিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

Do I look humsum?

Humsum বলতে ও যে Handsome বোঝাতে চাইছে সেটা আমি এতোদিনে বুঝেতে শিখেছি। আমি তখন একটু মজা করার জন্য বললাম,

You look like a criminal?

আমার কথায় ও খুব মজা পেয়ে মো ঝিঝি বললো,

yes, I look like a kilometer.

আমি বললাম, কিলোমিটার না, ক্রিমিনাল। ও মাথা নাড়িয়ে আমার কথায় সায় দিয়ে এবার আগের চেয়েও উচ্চস্বরে চিৎকার করে বললো,

Yes, I am one kilometer and you are two kilometer.

অর্থাৎ, সে এক ক্রিমিনাল ( কিলোমিটার)  আর আমি তার দ্বিগুণ ক্রিমিনাল (কিলোমিটার)। এই কথা বলে সেও আমার জন্য আর একটা কালো সানগ্লাস কিনে নিয়ে এসে আমাকে পরিয়ে দিয়ে বললো,

Let’s two kilometers photograph.

অর্থাৎ, চলো আমরা দুই কিলোমিটার (ক্রিমিনাল) ফটো তুলে রাখি। এখানে দেয়া আমাদের দুই কিলোমিটারের এ ছবিটি সে সময়ই তোলা।

সারা পৃথিবী বড় বড় সব পশ্চিমা ব্র‍্যান্ড, যেমন, Nike, Adidas, Ray Ban, Chanel, Prada, Michael Kor, Burberry, Armani সহ প্রায় সবই তৈরি হয় চীনের প্রত্যন্ত সব ফ্যাক্টরিগুলোতে। বিশ্ব বিখ্যাত আইফোনের ৯০% ই তৈরি হয় চীনের ফ্যাক্টরিতে। পশ্চিমা ব্র‍্যান্ডগুলো চীনারা ফ্যাক্টরিতে বানাতে বানাতে ইংরেজি ভাষাকেও চীনারা তাদের নিজস্ব ফ্যাক্টরির মেল্টিং পটে ভরে ফেলে কিছু নতুন নতুন আজগুবি শব্দ তৈরি করছে। এমন কটি জনপ্রিয় দোআঁশলা শব্দ হচ্ছে,

kiddren: children + kid

Emergent: Emergency + Urgent

Deformed Man’s Toilet: Disabled Toilet

কিছু কিছু সাধারণ ভুল এরা করবেই, আবার কিছু কিছু অক্ষর এরা এড়িয়ে চলে ছোটবেলা থেকে চর্চা করা এদের নিজস্ব ভাষা কাঠামো অনুসরণ করে চালনা করা জ্বিহবার অভ্যস্ততার কারণে। যেমন,

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই sun কে এরা বলবে sung, mine কে  miang, actually কে achuli, vibrant কে fybran, ইত্যাদি।

চীনাদের R উচ্চারণ করতে খুব কষ্ট হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওরা R বর্ণটি এড়িয়ে চলে। যেমন ৯৯% চীনারা River কে বলবে Liver,  Round কে বলবে Lound, Road কে বলবে Lod.

অন্যদিকে I like it very much কে বেশিরভাগ চীনা বলবে,

I very like

টয়লেট পরিস্কার রাখা সব নাগরিকের দায়িত্ব; এক জায়গায় এ বাক্যটির অনুবাদ করে সাইনেজ বানানো হয়েছে, এভাবে,

Civilization go the toilet thanks to everyone.

এক জায়গায় Cafe Latte এর অনুবাদ করা হয়েছে,

Coffee with Iron.

Please don’t bring in any external food এর অনুবাদ করতে গিয়ে লেখা হয়েছে,

Please Don’t be Edible

Hot Soup! Be careful এর অনুবাদ হয়েছে,

Careful Soup, যদিও এ স্যুপ খাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি।

Gents Toilet এর অনুবাদ হিসেবে সাইনেজ হয়েছে,

The Male Sex Toilet

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওরা ওদের ভাষার বাগধারা সরাসরি ইংরেজিতে অনুবাদ করে ফেলে যা অন্য ভাষীদের কাছে তাৎক্ষণিক হাস্যরসের উদ্রেক করে। যেমন ধরা যাক,  কাউকে উৎসাহ দিতে বা encouraged করতে ওরা যে বাগধারাটি ব্যবহার করে সেটা সরাসরি ইংরেজি অনুবাদ করে তা হলে সেটা হবে Add oil. বাংলা ভাষায় যেমন বলা হয় ঘৃতাহুতি দেয়া (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেগেটিভ অর্থে) অনেকটা সেরকম। যেমন উৎসাহ দিতে গিয়ে ওরা বলবে,

I will add oil to your plan.

এ ধরনের ইংরেজি শুনে ইংরেজি ভাষীরা চরম বিভ্রান্ত ও বিব্রত হয়ে হেসে উঠতে পারে।

অবশ্য সব ভাষায়ই এমনটি হতে পারে। বাংলা ভাষায়ও এমন অনেক বাগধারা আছে যেগুলো সরাসরি ইংরেজি অনুবাদ করলে চরম হাস্যকর বাক্য জন্ম দিতে পারে। যেমন, আমরা যদি, করিমের ব্যবসার বারোটা বেজে গেছে অথবা রহিমের চাকরির লালবাতি জ্বলে গেছে এ দু’টি বাংলা বাক্যের সরাসরি ইংরেজি অনুবাদ করি তাহলে যথাক্রমে কি দাঁড়াবে, দেখা যাক:

Karim’s business is twelve o’clock.

Rahim’s job red light has turned on.

তাই, শুধু চীনাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এ ধরনের সরাসরি যান্ত্রিক অনুবাদ যে কোন ভাষার ক্ষেত্রেই চরম হাস্যরসের জন্ম দিতে পারে।

অনুবাদের রসতাত্ত্বিক আলোচনা বাদ দিয়ে এখন বরং অন্য আর একটি তাজা ভাষা অভিজ্ঞতার গল্প বলি। গত পরশু সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলের জন্য হোটেল গ্রেড ডিপোজিট সেফ, মিনি বার, RFID Key Card door lock, Encoder, Hotel room door signage switch ইত্যাদি বানায় এমন এক ফ্যাক্টরির মালিক তার বিশাল ফোর্ড গাড়ি চালিয়ে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলো ফোশান শহরে তার ফ্যাক্টরি দেখাতে। হাইওয়ে ধরে গুয়াংজু থেকে গাড়িতে ফোশান শহর যেতে এক ঘন্টা লাগে। এই এক ঘন্টা আমাকে এরকম নানা ধরনে চৈনিক দোআঁশলা শব্দ শুনতে হয়েছে। প্রচন্ড ব্যস্ত গুয়াংজুর রাস্তা পার হয়ে গাড়ি হাইওয়েতে উঠতেই সে তার গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয় আর একের পর আলাপী প্রশ্ন করতে শুরু করে। তার প্রথম প্রশ্নই ছিলো,

How many kiddren you have?

kiddren বা children এর বিতর্কিত ঝামেলায় এড়িয়ে আমি সংক্ষেপে বলমাল,

I have two.

এবার প্রশ্ন,

boy or gal?

আমি বললাম,

One boy, one girl

আমি ভেবে দেখলাম এভাবে চলতে থাকলে ফোশান পৌঁছাতে পৌঁছাতে আগামী এক ঘন্টায় এ ব্যাটাকে আমার বাপদাদা আর চোদ্দগুষ্টির বংশ তালিকা  আর ফরায়েজ নামা দিয়ে যেতে হবে, তারচেয়ে বরং এটাকিং খেলি। জ্ঞানীরা বলেন, Attack is the best form of defence.  আমিও তাই উল্টো প্রশ্ন শুরু করলাম,

How many kids you have?

ও বললো,

two gals.

How old they are? এ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই সে নতুন চৈনিক- ইংলিশ বোমাটা মারলো,

One is 7 hours and other 3 hours old.

আমি হাসবো না কাঁদবো, বুঝতে পাচ্ছিলাম না। মনে মনে জিজ্ঞেস করছিলাম,

তোর এক মেয়ের বয়স ৭ ঘন্টা আর অন্য মেয়ের ৩ ঘন্টা, ব্যাটা তোর আর তোর বউয়ের বয়স কয় ঘন্টা আর সে হিসেবে আমার নিজেরই বা বয়স কয় ঘন্টা। তবে কথা আর না বাড়িয়ে আমি চুপচাপ থাকতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা আমার বরাতে ছিলো না। এরপরে একের পর এক প্রশ্ন আসতেই থাকলো, যেমন,

আমার স্ত্রীর বয়স কয় ঘন্টা,

আমার অফিসের বয়স কয় ঘন্টা,

আমার ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি নিতে কয় ঘন্টা লেগেছে,

কয় ঘন্টা আগে আমি পাস করেছি,

২০০ রুমের একটা ফাইভ স্টার হোটেল ইন্টেরিয়র সহ করতে আমাদের কয় ঘন্টা সময় লাগে, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এরপরের প্রশ্নে হঠাৎ ঘন্টা থেকে চলে গেলো বছরে, সে প্রশ্নটি হলো,

How many years by plane from Monjala to Guangzhou?

অর্থাৎ মনজালা ( মনের জ্বালা নয়, চীনারা প্রাচীন কাল থেকেই তাদের ভাষায় বঙ্গদেশকে ডাকে মনজালা বলে, গাজিপুরের মাওনার দিকে মনজালা টেক্সটাইল নামে একটা চাইনিজ ফ্যাক্টরিও আছে) থেকে গুয়াংজু প্লেনে আসতে কয় বছর লাগে।

আমি আর কি করি, বললাম,

ঢাকা থেকে গুয়াংজু প্লেনে যেতে সময় লাগে প্রায় তিন বছর।

এভাবে ঘন্টা, বছরের বিদঘুটে নানা আলাপ করতে করতে এক পর্যায়ে আমরা ওর ফ্যাক্টরির কাছে আসলাম, তখন ও বললো,

Let me take boss to my showel Loom fast.

Shower Room কে ও উচ্চারণ করে Showel Loom, এ কথা শুনে আমি সত্যি সত্যি আঁতকে উঠলাম। ফ্যাক্টরি দেখতে এসেছি, আমাকে শাওয়ার রুমে নিতে চাচ্ছে কেন? ব্যাটা কি আমাকে পানিতে চোবাতে চাচ্ছে। একদিকে আমাকে বস ডাকছে, বসকে কি কেউ কোনদিন পানিয়ে চুবায়? গত কয়েক বছরে ওর কাছ থেকে যতো মালামাল নিয়েছি কোন বাকি তো রাখা হয়নি তা হলে আমাকে পানিতে চুবাতে চাচ্ছে কি কারণে?

আমার তখন গলা শুকিয়ে গেছে, আমি কোনক্রমে মিনমিনিয়ে বললাম,

I already took shower in the morning, I don’t need anymore shower today. Please try to understand.

কে শোনে কার কথা অনেকটা হাত ধরে প্রায় জোর করেই আমাকে শাওয়ার রুমে নিতে নিতে যা বললো তর্জমা করলে তার অর্থ হয়,

আরে, আরে, সকালে গোসল করেছো তো কি হয়েছে, সকালে একবার গোসল করলেও শাওয়ার রুমে যাওয়া যায়।তুমি বৃথা তর্ক করছো। আমি তখন অনেকটা বাটে পড়া আসামির মতো এই স্বজনহীন ভিনদেশে চরম অসহায় বোধ করছি আর ভাবছি এ বিপদ থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায়। মুখে না বললেও মনে মনে বলছিলাম,

আরে ব্যাটা, এই ভর দুপুর বেলা আমি তো এমন কোন কর্ম করিনি যে মুসলিম শরিয়ত অনুযায়ী আমার গোসল ফরজ হয়ে গেছে তবুও আমাকে এ অসময়ে গোসল করতে হবে কেন? তাছাড়া আমি সাথে করে লুঙ্গিও আনিনি তাই গোসল করবো কিভাবে?

কিন্তু কে শোনে কার কথা। জ্ঞানীদের মুখে বহুবার শুনেছি,

“পড়েছো মোগলের হাতে,খানা খেতে হবে সাথে।”

এখন এর ভয়ংকর সংস্করণ হিসেবে এবার দেখছি,

“পড়েছো চীনার কবলে,চুবনি খেতে হবে সবলে।”

একটা খাড়া সিড়ি ভেঙে আমাকে তার শাওয়ার রুমে নিয়ে গেলো। সেখানে ঢুকে অনেকটা টিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের মতো অতি নাটকিয় ভাবে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে স্বগর্বে আমাকে বললো,

This is my 5 thousand square mit Shower Loom.

ওরা মিটার কে সাধারণত মিট বলে, কিন্তু স্পেসটাকে ৫ হাজার বর্গমিটার বলে মোটেও মনে হলো না। বুঝতে পারলাম এখানেও সে hundred এর জায়গায় thousand বলছে, যেভাবে hour এর জায়গায় আগে year বলেছিলো। অর্থাৎ তার শোরুমের এরিয়া ৫ হাজার বর্গমিটার নয়, এটা হবে ৫ শ বর্গ বর্গমিটার।  তবে সবচেয়ে আসল কথা হলো ততক্ষণে Shower Room এর অর্থ আমি বুঝে গেছি ও বিপদ মুক্ত ভেবে নিজেকে খুব চাপ মুক্ত অনুভব করতে শুরু করেছি। কেননা Shower Room ( Shower Loom) আসলে হচ্ছে Showroom,  আরো স্পেসিফিক করে বলতে গেলে তার Product Exhibition Room.

চুবানির ভয় মুক্ত হয়ে আমার মধ্যে আবার আগের এটাকিং ভাব চলে আসলো।  আমি বুক ফুলিয়ে তার বিভিন্ন প্রোডাক্ট দেখতে লাগলাম আর কঠিন কঠিন টেকনিক্যাল প্রশ্ন করে ওকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললাম। বাঙালি কেমন চিজ সে জানেনা, বাঙালি এমন আলতো ভাবে প্রতিশোধ নেবে যে প্রতিপক্ষ জানতেই পারবে না যে তার উপর প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে।

আর একজন চীনা আউটডোর ও গার্ডেন ফার্নিচার ডিজাইনারের কথা বলি। ইউরোপ আমেরিকার অস্যংখ্য ফাইভ স্টার ও মধ্য প্রাচ্যের কিছু সেভেন স্টার হোটেলের জন্য সে আউটডোর ও গার্ডেন ফার্নিচার বানায়। ওর নাম Ronald Carter, এটা ওর আসল নাম নয়, এটা ওর ব্যাবসায়িক নাম। Ronald Reagan আর Jimmy Carter এই দু’জন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের নাম যুক্ত করে সে তার বানিজ্যিক নাম রেখেছে তার আমেরিকান ক্রেতাদের খুশি করার নিয়তে।

এখানে জিনিসটা পরিস্কার করে বলি, চীনে যারা আন্তর্জাতিক ব্যাবসা বানিজ্যের সাথে যুক্ত তারা তাদের পশ্চিমা ক্রেতাদের উচ্চারণের সুবিধার্থে ও সহজে মনে রাখার জন্য এক বা একাধিক পশ্চিমা নাম রাখে। মজার কথা হলো আমেরিকান ক্রেতার জন্য তার নাম Ronald Carter হলেও ফ্রান্সের ক্রেতাদের জন্য তার নাম Pierre Wang. ভিন্ন ভিন্ন নামের জন্য আলাদা আলাদা নেইম কার্ড ও উইচ্যাট একাউন্টও আছে।

উত্তর চীনের তিয়ানজিনের এই Ronald Carter সাথে আমার বহু বছরের পরিচয় ও বন্ধুত্ব। সারা পৃথিবীতে সে তার প্রোডাক্ট বিক্রি করে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মার্কেটিংয়ের জন্য তার অধীনে আছে প্রায় ডজনখানেক মার্কেটিং অফিসার। এদের প্রায় সবাই international Business এর উপর চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যাল থেকে ডিগ্রি অর্জনকারী নারী। ধরা যাক পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলে মার্কেটিংয়ের জন্য তার মার্কেটিং অফিসারের নাম হলো  Margaret. এই Margaret হয়তো ২ বছর চাকরি করার পর অন্য কোথাও চাকরি নিলো, তখন তার জায়গায় অন্য একজনকে নেয়া হলো, তার নামও কিন্তু হবে Margaret. নতুন Margaret এর টেলিফোন নাম্বার, ইমেইল, উইচ্যাট সবই কিন্তু হবে আগের Margaret যেটা ব্যবহার করতো সেটা। বিদেশি ক্রেতা অনেকক্ষেত্রে জানতেই পারবে না যে বছরে বছরে নতুন নতুন Margaret এর সাথে তার করেস্পোডেন্স হচ্ছে। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ থেকে আগত ভিন্ন ভিন্ন বয়সের ভাগ্যান্বেষী নারীরা মার্কেটিং অফিসার হিসেবে তার অফিসে যোগ দিয়েই তার আজন্ম সব পরিচয় হারিয়ে ফেলে হয়ে যাচ্ছে Margaret.  তারপর আবার সে যখন অন্য কোন অফিসে যোগ দিচ্ছে তখন সে হয়ে যাচ্ছে Wendy, Summer, Ricky কিম্বা  Samantha.

ফিরে আসি Ronald Carter এর গল্পে। অনেকদিন আগের কথা, একদিন সে আমার সাথে এক উইঘুর মুসলিম রেস্টুরেন্টে  লাঞ্চ করার সময় মুখ গোমড়া করে বসে ছিলো। হান চাইনিজ বা মেইন স্ট্রিম চীনারা শিনঝিয়াংয়ের মুসলিম অধ্যুসিত উইঘুর রেস্টুরেন্টে খেতে তেমন পছন্দ করে না, আমার নিজেরও অবশ্য তেমন পছন্দ না, তবে শুধুমাত্র হালাল খাবার জন্য এখানে খেতে হয়। আমি ভাবলাম খাবার পছন্দ না বলেই বোধ হয় ও অমন মুখ গোমড়া করে বসে আছে। আমি তবুও জিজ্ঞেস করলাম,

What’s wrong?

খেয়ালি রিগান মৃদু ঝারি দিয়ে উত্তর দিলো,

I am tree and she is tree.

আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম। এটা কোন ধরনের উত্তর।

I am tree and she is tree. এর মানে কি? মানুষ কি করে ট্রি হয়?

আমার বিব্রত ভাব দেখে সে এবার নানা রকম অদ্ভুত ইংরেজিতে বিস্তারিত যা বললো তার সংক্ষিপ্ত শানে নজুল হচ্ছে,

ও আর ওর স্ত্রীর মধ্যে বিরাট ঝগড়া হয়েছে। কথা বন্ধ, স্পর্শ বন্ধ, দুই সপ্তাহ ধরে ওকে লিভিং রুমের সোফায় ঘুমাতে হচ্ছে। কারো সাথে কারো মুখ দেখাদেখি নাই।  এক কথায় তারা দুইজনই Tree অর্থাৎ বৃক্ষ হয়ে গেছে। বৃক্ষেরা যেমন একজনের দিকে  একজন তাকায় না, কথা বলে না, পরস্পরকে স্পর্শ করে না, তাদের দাম্পত্য জীবনের অবস্থা হুবহু দুটি দূরে দাঁড়িয়ে থাকা স্থির বৃক্ষের মতো।

I am tree and she is tree. এ জাতীয় ইংরেজি শুনে আমার গলা ফাটিয়ে হাসার কথা কিন্তু আমি হাসলাম না। আমি ওর উপমা জ্ঞানে অভিভূত হয়ে গেলাম। I am tree and she is tree. এই মাত্র একটা বাক্যের মাধ্যেমে কি অপূর্ব সুন্দরভাবে ও ওদের দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েনের চরম অবস্থার কি সুন্দর ও নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছে। পৃথিবীর কয়জন গল্পকার বা ঔপন্যাসিক একটিমাত্র বাক্যে তার জীবনের চরম অসহনীয় অবস্থার এমন পার্ফেক্ট বর্ণনা দিতে পারবে না।

পরবর্তীতে শুনেছি ওদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। ওরা সত্যি সত্যিই সারা জীবনের জন্য He is tree and she is tree হয়ে গেছে। মানুষকে জীবনে কখনো কখনো এমন বৃক্ষ হয়ে যেতে হয়। শত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বৃক্ষের মতো মানুষ তার নিজের জায়গা থেকে আর নড়তে পারে না।

গুয়াংজু, গণচীন,

২২ অক্টোবর, ২০২৩

আরও পড়ুন
মন্তব্য
Loading...